জাকাত
কুরআনের আলোকে যাকাতের বিধান :
প্রিয় ভইয়েরা! কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
]وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ[ (البينة:৫)
'তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, জাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।'[১]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
]وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ هُوَ خَيْراً وَأَعْظَمَ أَجْراً[ (المزمل:২০)
'তোমরা যথানিয়মে সালাত আদায় কর, জাকাত প্রদান কর, আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ দাও, আর তোমরা নিজেদের কল্যাণে যা অগ্রে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ প্রতিদান হিসাবে প্রাপ্ত হবে।'[২]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
]وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِباً لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ[ (الروم:৩৯)
'তোমরা মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির নিমিত্তে যে সুদ ভিত্তিক লেনদেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহর নিকট কোন লাভজনক নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে জাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, (তা বৃদ্ধি পায়) ফলত জাকাত প্রদানকারীগণ মুনাফাকে দ্বিগুণ করে নেয়।'[৩]
এ ছাড়াও জাকাতের বিধান সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াত রয়েছে।
হাদিসের আলোকে জাকাতের বিধান :
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে। যথা : এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সালাত আদায় করা, জাকাত প্রদান করা, সিয়াম পালন করা ও হজ সম্পাদন করা।'[৪]
এ কথা শুনে একলোক বলল, হজ অতঃপর রমজানের সিয়াম? তিনি বললেন, না, বরং প্রথমে রমজানের সিয়াম, তারপর হজ। এ তারতিবেই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে : এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, 'এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।'
সুতরাং বুঝা গেল, জাকাত ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর একটি। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে সালাতের পাশাপাশি জাকাতের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
ইজমা :
সকল মুসলিম একমত যে, জাকাত একটি ফরজ বিধান। সুতরাং জাকাত ফরজ জেনেও যদি কোন ব্যক্তি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে জাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দিবে, সে লাঞ্চনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।
চার ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ :
প্রথম প্রকার : ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফল-ফলাদি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ[ (البقرة:২৬৭)
'হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় কর।'[৫]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وآتو حقه يوم حصاده. (الأنعام : ২৬৭)
'ফসল কাটার সময় তার হক (জাকাত) আদায় কর।'[৬]
ফসলের জাকাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
فيما سقت السماء أو كان عثريا العشر وفيما سقى بالنضح نصف العشر.
'বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন ফসল ও উশরী জমিতে উৎপন্ন ফসলের জাকাত বিশ ভাগের একভাগ।'[৭]
ফসলের ওপর জাকাত ওয়াজিব হওয়ার নির্ধারিত পরিমাণ হচ্ছে 'নিসাব'। পাঁচ ওসকে নিসাব হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لَيْسَ فِي حَبٍّ وَلَا تَمْرٍ صَدَقَةٌ حَتَّى تَبْلُغَ خَمْسَةَ أَوْسُقٍ.
'শস্য বা ফলমূল এর ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ তা পাঁচ ওসক পরিমাণ না হয়।'
'ওসক' এর পরিমাণ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যবহৃত ৬০ 'সা' এর সমপরিমাণ এক ওসক। সে হিসেবে জাকাতের নিসাব হওয়ার জন্য ৩০০ 'সা' এর প্রয়োজন। আর এক 'সা' সমপরিমাণ ২০৪০ গ্রাম। সুতরাং নিসাব এর পরিমাণ দাড়াল ৬১২ কেজি। তাই এর কম ফসলে মধ্যে জাকাত ওয়াজিব নয়। উক্ত নিসাবে বিনাশ্রমে প্রাপ্ত ফসলে জাকাতের পরিমাণ হল এক দশমাংশ আর শ্রম ব্যয়ে প্রাপ্ত ফসলে জাকাতের পরিমাণ হল এক বিশমাংশ।
ফলমূল, শাক-সব্জি, তরমুজ ও এ জাতীয় বস্তুর ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। ওমর রা.বলেন,
ليس في الخضروات صدقة
'শাক-সব্জিতে জাকাত নেই।' আলী রা. বলেন,
ليس في التفاح وما اشبه صدقة
'আপেল ও এ জাতীয় ফলের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়।'
যেহেতু এগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার জাতীয় শস্য বা ফল নয়, তাই এর ওপর জাকাত নেই। তবে যদি এগুলো টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়, যার অংক নিসাব পরিমাণ, তাহলে এ মূল্যের ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাকাত ওয়াজিব হবে।
দ্বিতীয় প্রকার : যে সকল প্রাণীর ওপর জাকাত ওয়াজিব হয় তা হল, উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা হয় ও মাঠ চড়ে ঘাষ খায় এবং এগুলো বংশ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় ও তা নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে এদের জাকাত দিতে হবে। উটের নিসাব ন্যুনতম ৫টি, গরুর ৩০টি, আর ছাগলের ৪০টি।
সায়িমা ঐ সকল প্রাণীকে বলে, যেগুলো সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা না হয়, তবে এর ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। কিন্তু ব্যবসার উদ্দেশ্যে পালন করা হলে, সর্বাবস্থায় এগুলোর জাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়। আর নিসাবের কম হলে এগুলোর মূল্য অন্য সম্পদের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে।
তৃতীয় প্রকার : স্বর্ণ- রৌপ্যের ওপর (নিসাব পরিমাণ হলে) সর্বাবস্থায় জাকাত ফরজ।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
]وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ. يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لانْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ[ (التوبة:৩৪-৩৫)
'যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে না। আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান করুন। কিয়ামত দিবসে ঐ সোনা-রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠে ছেকা দেয়া হবে এবং বলা হবে এ হল তোমাদের সে সকল ধন-সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে। সুতরাং আজ জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর।'[৮]
সঞ্চয় করে রাখার অর্থ হল, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিমাণ মত ব্যয় না করা। আর সর্বোত্তম ব্যয় হল- জাকাত প্রদান করা।
এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ما من صاحب ذهب ولا فضة لا يؤدي منها حقها إلا إذا كان يوم القيامة صفحت له صفائح من نار فأحمى عليها في نار جهنم فيكوى بها جنبه وجبينه وظهره كلما بردت أعيدت له في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة حتى يقضي بين العباد. رواه مسلم
'যে সকল সোনা-রূপার মালিকগণ তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্রস্তুত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ঐ লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে, তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে পুনরায় চেপে ধরা হবে। পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে।'[৯]
হক আদায় না করার অর্থ হল জাকাত আদায় না করা। যা অন্য রেওয়ায়েতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
সোনা-রূপ জাতীয় দিনার, দিরহাম, চাকা বা টুকরা, অলংকারসহ সকল কিছুর ওপরই জাকাত ফরজ, কারণ সোনা-রূপা সংক্রান্ত সকল আয়াত বা হাদীসে এগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَهَا وَفِي يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهَا أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا قَالَتْ لَا قَالَ أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ-رواه النسائي وأبو داؤد
'একদা একজন মহিলা তার মেয়েকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল, ঐ মেয়ের হাতে স্বর্ণের দু'টি ভারি ও মোটা বালা ছিল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত দাও? মেয়ে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এগুলোর দ্বারা দু'টি আগুনের চুড়ি বানিয়ে তোমার হাতে পড়িয়ে দিবেন? মেয়েটি এ কথা শুনে বালা দু'টি খুলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে বলল : এগুলো আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।
অন্য এক হাদীসে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَى فِي يَدَيَّ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنَّ قُلْتُ لَا أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنْ النَّارِ-رواه أبو داؤد
'একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন তখন আমার হাতে কয়েকটি রূপার আংটি ছিল, তখন তিনি বললেন, এগুলো কি? আমি বললাম, আপনার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য এগুলো তৈরি করেছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত প্রদান কর? আমি বললাম না, তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।[১০]
সোনা-রূপার নিসাব পূর্ণ হলে তার ওপর জাকাত ফরজ :
স্বর্ণের নিসাব হল ২০ দিনার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ليس عليك شيئ حتى يكون لك عشرون دينارا
'সোনা বিশ দিনার পরিমাণ হলে তাতে জাকাত ফরজ হবে।'[১১]
দিনার বলতে ইসলামী দিনার উদ্দেশ্য যার ওজন এক মিছকাল। মিছকাল সমান সোয়া চার গ্রাম। সে হিসাবে সোনার নিসাব হল ৮৫ গ্রাম। যা এ দেশীয় মাপে ৭.৫ ভরি হয়।
রূপার নিসাব হলো পাঁচ আওকিয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ليس فيما دون خمس اواق صدقة
'পাঁচ আওকিয়ার কম রূপার ওপর জাকাত নেই।'[১২]
এক আওকিয়া সমান ৪০ ইসলামী দিরহাম। সে মতে রূপার নিসাব হল ২০০ দিরহাম। আর এক দিরহাম হল এক মিছকালের সাত দশমাংশ, এর মোট ওজন ১৪০ মিছকাল, যার বর্তমান প্রচলিত ওজন হল, ৫৯৫ গ্রাম। যা এ দেশীয় মাপে ৫২.৫ ভরি, তা থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ জাকাত দেয়া ফরজ।
কাগজের তৈরি নোটের ওপরও জাকাত ওয়াজিব। কারণ এ নোটগুলো রূপার বদলেই চলমান, সুতরাং এগুলো রূপার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং এর মূল্য রূপার নিসাবের সমপরিমাণ হলে, তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে।
সোনা-রূপা ও কাগজের নোট ইত্যাদির ওপর সর্বাবস্তায় জাকাত ওয়াজিব। চাই এগুলো হাতে মজুদ থাকুক বা অন্য কারো কাছে ঋণ থাকুক। এ থেকে বুঝা যায়, সব ধরনের ঋণ (চাই তা কর্জ হোক বা বিক্রয়কৃত মূল্য হোক অথবা ভাড়া বা এ ধরনের যাই হোক না কেন) তার ওপর জাকাত ওয়াজিব। উক্ত ঋণ আদায় হওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর অন্যান্য সম্পদের সাথে সাথে এগুলোর জাকাত দিতে হবে। এক সাথেও দিতে পারে, যদি ঋণ এমন লোকের কাছে থাকে যে স্বচ্ছল এবং যার থেকে সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর যদি দরিদ্র বা প্রতারক লোককে ঋণ দেয়া থাকে, তাহলে ঋণ আদায় হওয়ার পর শুধুমাত্র ঐ বছরের জাকাত প্রদান করবে।
সোনা-রূপা ছাড়া অন্য সকল খনিজ পদার্থের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। তবে যদি সেগুলো ব্যবসার জন্য হয়ে থাকে, তবে নিসাব পরিমাণ হলে অবশ্যই জাকাত দিতে হবে।
চতুর্থ প্রকার : ব্যবসায়ী পণ্য। স্থাবর-অস্থাবর সকল প্রকার ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর জাকাত ওয়াজিব। বছরান্তে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করত, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। মেশিনারিজ বা খুচরা যন্ত্রাংশ ও এ জাতীয় ক্ষুদ্র পণ্যের ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হল, ছোট-বড় সকল অংশের মূল্য নিধারণ করে নিবে, যাতে কোন কিছু বাদ না পড়ে। পরিমাণ নির্ণয়ে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সতর্কতামূলক বেশী দাম ধরে জাকাত আদায় করবে, যাতে সে সম্পূর্ণ দায়িত্ত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে।
মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, আসবাবপত্র, বাহন, পোষাক, (সোনা-রূপা ছাড়া) অলংকারসহ ব্যবহার্য পণ্যের ওপর জাকাত আবশ্যক নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'মুসলিমদের গোলাম, বাদী, ঘোড়া এগুলোর ওপর জাকাত নেই।'
ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের ওপর জাকাত আসবে না। তবে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর নিসাব পূর্ণ হবার পর জাকাত আসবে।
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আসুন আমাদের সম্পদের জাকাত যথাযথ ভাবে আদায় করে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি, এতে আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হবে, কোন অকল্যাণ বা ক্ষতি হবে না।
আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের প্রদানকৃত জাকাত কবুল করেন এবং অবশিষ্ট সম্পদে বকরত দান করেন। আমীন
সমাপ্ত
[১] বাইয়্যিনাহ : ৫
[২] মুজাম্মিল : ২০
[৩] রূম : ৩৯
[৪] বুখারী ও মুসলিম
[৫] বাকারা : ২৬৭
[৬] আনআম : ৪১
[৭] বুখারী
[৮] তওবা : ৩৪-৩৫
[৯] মুসলিম : ৯৮৭
[১০] আবু দাউদ, হাকিম
[১১] আবু দাউদ
[১২] বুখারী, মুসলিম
_________________________________________________________________________________
লেখক : মুহাম্মদ সালে বিন আল-উসাইমিন
تاليف : محمد صالح بن العثيمين
অনুবাদক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
ترجمة : ثناء الله نذير أحمد
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض